
প্রকাশিত: Mon, Feb 13, 2023 7:58 AM আপডেট: Fri, Jun 27, 2025 7:52 AM
লেখক মূলত ‘আমি’র বিলুপ্তি ঘটাতেই লিখতে তৎপর হন
স্বকৃত নোমান : অযোগ্যকে যখন যোগ্য বলে বিবেচিত করা হয়, মূল্যায়িত করা হয়, সম্মানিত করা হয়, তখন তার মধ্যে প্রবলভাবে ‘আমি’ ভর করে। সে আর ‘আমি’ ছাড়া কথা বলতে পারে না। ‘আমিত্বে’র ভারে সে নুয়ে পড়ে, সারাক্ষণ ‘আমি আমি’ প্রচারে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। বস্তুত ‘আমি’ বলে কিছু নেই। মানুষের ইতিহাস মূলত ‘আমরা’ বা ‘আমাদের’ ইতিহাস।
আপনি যে লিখছেন, তা এককভাবে আপনি লিখছেন না। আপনার লেখার পেছনে কলমের ভূমিকা আছে, কলম তৈরির মেশিনের ভূমিকা আছে, মেশিন তৈরির ইঞ্জিনিয়ারের ভূমিকা আছে। আপনার লেখার পেছনে কাগজের ভূমিকা আছে, বৃক্ষের ভূমিকা আছে, বৃক্ষ থেকে কাগজ তৈরির নেপথ্যে অসংখ্য মানুষের ভূমিকা আছে। যে কৃষক জমিনে চাষ করছে, সে এককভাবে চাষ করছে না, তার চাষাবাদের পেছনে সূর্যের ভূমিকা আছে, বায়ুর ভূমিকা আছে, বৃষ্টির ভূমিকা আছে। যে হাল দিয়ে সে জমিন চষছে, সেই হালের ভূমিকা আছে, হালের কারিগরের ভূমিকা আছে।
লেখক মূলত ‘আমি’র বিলুপ্তি ঘটাতেই লিখতে তৎপর হন। তার ‘আমি’কে সে ‘আমরা’র মধ্যে বা ‘আমাদের’ মধ্যে ছড়িয়ে দেয়, তার ‘আমিত্ব’কে সর্বসাধারণের মধ্যে ছড়িয়ে দেয়। লেখক যখন সারাক্ষণ ‘আমি আমি’ করে বেড়াবে, তখন বুঝতে হবে, তার মধ্যে দার্শনিক পূর্ণতা এখনো আসেনি। কিংবা তার মধ্যে দর্শন-শূন্যতা দেখা দিয়েছে, তার ভাঁড়ার শূন্য হয়ে পড়েছে। শূন্যতাকে পূর্ণতা দেওয়ার জন্য তখন তার উচিত পুনর্বার জ্ঞানসরোবরে স্নান করে আসা, সরোবারের স্বচ্ছ জলে ‘আমি’কে বিসর্জন দিয়ে আসা।
শান্তিপ্রস্তাব নিয়ে শ্রীকৃষ্ণ যখন হস্তিনাপুরে গেলেন, দুর্য্যােধনের ঔদ্ধত্য তখন সীমা ছাড়িয়ে গিয়েছিল, কেবলই তিনি ‘আমি আমি’ করছিলেন। সুন্দর জবাব দিয়েছিলেন কৃষ্ণ। বলেছিলেন, এই রাজসভার সামনে তোমার আকার কতটুকু, হে দুর্য্যােধন? হস্তিনাপুরের সামনে এই সভার আকার কতটুকু? এই পৃথিবীর সামনে এই হস্তিনাপুরের আকার কতটুকু? আর এই ব্রহ্মাণ্ডের সামনে এই পৃথিবীর আকার কতটুকু?
যখন ব্যক্তির অভিমান ও দম্ভ তার আকারের চেয়ে বড় হয়ে যায়, তখন সে আসলে নিজেই নিজেকে হত্যা করে। অভিমান ও দম্ভ প্রবল হয়ে উঠলে ‘আমি’ শ্রুতিকটু হয়ে ওঠে। কানে লাগে, বিশ্রী লাগে, বিরক্তি লাগে। সাধারণের আমিত্ব প্রচারে দোষ নেই। কারণ সে জানে না সে কতটা তুচ্ছ, কতটা নগণ্য। লেখকের ‘আমিত্ব’ প্রচার অতিমাত্রায় শ্রুতিকুটু মনে হওয়া স্বাভাবিক। কারণ সে জানে এই বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের সামনে সে নিতান্তই তুচ্ছ, নিতান্তই গৌণ। লেখক: কথাসাহিত্যিক
আরও সংবাদ
চ্যাম্পিয়ন ভারত : একটা ছোট মুহূর্ত কতো বড় পার্থক্য গড়ে দিতে পারে
‘ওই ক্যাচ হয়নি, সুরিয়াকুমারকে আবার ক্যাচ ধরতে হবে’!
কতো দেশ, কতোবার কাপ জিতলো, আমাদের ঘরে আর কাপ এলো না!
সংগীতাচার্য বড়ে গোলাম আলি খান, পশ্চিমবঙ্গের গর্ব সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় ও আমি
ইন্ডিয়ান বুদ্ধিজীবী, ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্র ও দেশের বুদ্ধিজীবী-অ্যাক্টিভিস্ট
মতিউর প্রতিদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ৮৩ ব্যাচের বন্ধুদের গ্রুপে সৎ জীবন যাপনের উপদেশ দিতেন!

চ্যাম্পিয়ন ভারত : একটা ছোট মুহূর্ত কতো বড় পার্থক্য গড়ে দিতে পারে

‘ওই ক্যাচ হয়নি, সুরিয়াকুমারকে আবার ক্যাচ ধরতে হবে’!

কতো দেশ, কতোবার কাপ জিতলো, আমাদের ঘরে আর কাপ এলো না!

সংগীতাচার্য বড়ে গোলাম আলি খান, পশ্চিমবঙ্গের গর্ব সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় ও আমি

ইন্ডিয়ান বুদ্ধিজীবী, ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্র ও দেশের বুদ্ধিজীবী-অ্যাক্টিভিস্ট
